ঈদের ইতিহাস

ঈদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে ঈদ অর্থ কি? ঈদ মানে উৎসব। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর সর্বপ্রথম ঈদ পালনের রীতি চালু হয়।

ঈদের ইতিহাস

মুসলমানরা প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করে হিজরি ২য় সনে। ইংরেজি সাল গণনায় ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের শেষের কোন একটি দিনে ঈদ পালন করা হয়।

আজকের বিষয় সমুহ।

ঈদ সম্পর্কে কিছু কথা

মুসলিমদের বিশেষ আনন্দের দিন হচ্ছে ঈদের দিন। এই দিনে সমস্ত মুসলিমগণ একত্রিত হয়ে ঈদের নামাজ জামায়াতের সহিত আদায় করে। ঈদের সময় এলে সমস্ত পরিবারের লোকজন একত্রিত হয়ে যায়। কারণ এই ঈদের আনন্দ একাকীত্বভাবে উপভোগ করা যায় না। এটি মহান আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ রহমত এবং নেয়ামতের সময়।

শাবান মাসে রোজা বাধ্যতামূলক করার আয়াত নাজিল হয়। তখন নবম মাস অর্থাৎ রমজান মাসে একমাস সিয়াম সাধনাকে ফরজ করা হয়। এই এক মাস পবিত্র রমজান পালন করার পর, ঈদের দিনটি মুসলমানদের জন্য আনন্দ স্বরূপ দিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মদিনায় হিজরত করলেন। তখন দেখলেন সেখানকার লোক বছরে দুইটি উৎসব পালন করে। উৎসব দুটির নাম হল নওরোজ এবং মিহিরজান। এই উৎসব দুটির আদলে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর আদেশে মুসলমানদের জন্য বছরে দুটি উৎসব অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদ উল আযহা উদযাপিত করার আদেশ দেন। এভাবেই শুরু হয় ঈদুল ফিতর ঈদুল আযহার উদযাপন করার মুহূর্ত।

ঈদ আনন্দ নিয়ে কিছু কথা

এই দিনটিকে মহান আল্লাহ তায়ালা সবার জন্য আনন্দময় করে দিয়েছেন। প্রত্যেকটি মানুষ ধনী হোক কিংবা গরীব হোক সবাই এই দিনটি উদযাপন করার অধিকার রাখে। মহান আল্লাহ তা’আলা ধনীদের উপর যাকাত খরচ করে দিয়েছেন। তাছাড়াও ঈদের নামাজের আগে ফিতরা দিতে হয়। কেননা ধনীদের পাশাপাশি যেন গরীবরাও এই এই দিনের আনন্দ পুরোপুরিভাবে উপভোগ করতে পারে। তারা যেন অভাবের তাড়নায় পড়ে ঈদের কোন আনন্দের অংশ থেকে যেন দূরে না পরে। তার জন্যই এটি মহান আল্লাহ তায়ালা ধনীদের উপর ফরজ করে দিয়েছেন। তাই আমাদের উচিত আমাদের সাধ্যমত সবার সাথে এই ঈদের উৎসব ভাগাভাগি করে নেওয়া।

বাঙালির ঈদ উৎসব

বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে বড় উদযাপন এবং আনন্দময় দিন হল ঈদ। আর কোন দিনের সাথে তুলনা করা যায় না এই দিনটিকে। বাঙালিরা ঈদের আগে মিছিল বের করে আনন্দ ছড়িয়ে দিতো। এখনো দেয় কিছি জায়গায়। কিন্তু করোনা আসার পর থেকে এটি করা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

ঈদ অর্থ উৎসব। আবার ঈদ অর্থ কিছু জায়গায় বারবার ফিরে আসা কেউ বোঝানো হয়েছে। কেননা প্রতি বছর পর পরই এই আনন্দময় দিনটি আসে। এক মাস রোজা পালন করার পর প্রত্যেক মুসলমান উদযাপন করে। তার দুই মাস দশ দিন পর ঈদুল আযহা অথবা কুরবানীর ঈদ চলে আসে। কিছু কিছু দেশে ঈদুল আযহা কে ঈদে কুরবান হিসেবে বলা হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন: রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধ

প্রত্যেক জাতি কোনো না কোনো ভাবে নিজের কিছু আল্লাহর জন্য ত্যাহ করে থাকে। এই প্রথা ইব্রাহিম (আ:) এর পর থেকে চালি হয়েছে। তাই আমাদেরও উচিত আল্লাহ কে খুশি করার জন্য যদি আমাদের প্রিয় বস্তুকে ত্যাগ করতে হয় তাহলে আমরা করবো। যেমন, কুরবানিতে গরু কুরবান দেওয়া।

তবে ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য রোজা রেখে আমাদের আল্লাহকে খুশি করতে হয়। কারণ রোজা রেখে দিনের বেলা সমস্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকি,স্ত্রি সহবাস থেকে বিরত থাকি। এই সময় আল্লাহর ইবাদতের মশগুল থাকতে হয়। এভাবেই আল্লাহর জন্য ত্যাগ করতে হয়।

বাঙালির ঈদ উৎসব

বড় ঈদ কোনটি

ঈদুল ফিতরকে বড় ঈদ বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এই কথাটির প্রচলন রয়েছে। এই দিনটি পেলে মুসলিমরা যেন ছাড়তে চায় না! তার কারন একটা অজানা আনন্দ মনের ভিতর আসে। নিশ্চয় এটি আল্লাহর রহমত। তাই অনেকে কামনা করে দিন্তি যদি আরো বড় হত! তবে বড় ঈদ হসেবে ঈদুল ফিতরকে বোঝানো হয়ে থাকে।

ঈদ সম্পর্কে হাদিস

হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা থেকে যখন হিজরত করে মদীনায় আসলেন তখন দেখলেন, মদীনাবাসী খেলা-ধূলার মধ্য দিয়ে দুটি দিবস পালন করে থাকে। তিনি(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি দিবস কি? তখন তারা বলল, এ দুটি দিবস জাহেলী যুগে আমরা খেলা-ধুলার মধ্যদিয়ে উদযাপন করতাম। তিনি(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “আল্লাহ তোমাদের জন্য এর থেকে উত্তম দুটি দিবসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন একটি হল, ঈদুল আযহা এবং অপরটি হল, ঈদুল ফিতর।” (সুনান আবূদাঊদ, হাদীস নং ৯৫৯ সনদ-সহীহ, আলবানী রহঃ)

এই হাদীস দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে মুসলিমদের জন্য ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ব্যতীত অন্য কোন অনুষ্ঠান অথবা অন্য কোন দিবস পালন করা উচিত নয়। কারণ মহান আল্লাহ তায়ালা আনন্দ উদযাপন করার জন্যই মুসলমানদের জন্য এই দুটি দিবস ধার্য করে দিয়েছে। তাই আমাদের উচিত এই নিয়মের বাইরে অন্য কোন দিবস পালন না করা।

ঈদের কিছু ছন্দ

ঈদ উদযাপনের পাশাপাশি মুসলমানরা বর্তমান ডিজিটাল সময়কে কাজে লাগিয়ে অনেকেই অনলাইন জগতে অথবা মোবাইল দিয়ে এসএমএসের মাধ্যমে একে অপরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকে। এই শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে কিছু ছন্দ একে অপরের সাথে শেয়ার করে। কিন্তু অনেকেই এই ছন্দ লিখতে জানেনা। তাদের সুবিধার্থেই নিচে ঈদ নিয়ে কিছু ছন্দ দেওয়া হল :-

১. ফুলে ফুলে সাজিয়ে রেখেছি এই মন । তুমি আসলে দুজনে মিলে আনন্দ করবো সারাক্ষণ । বন্ধু তুমি আসবে বলে দরজায় থাকি দরিয়ে । ঈদ মোবারক , শুভ হোক তোমার ঈদ

২. দিনে গরম রাতে শীত সামনে আসছে কুরবানি ঈদ, সাদা রুটি মাংসের ঝোল, খেতে তোমরা করোনা ভুল । ঈদে থাকব হাসি খুশি তোমাকে চাই পাশাপাশি

৩. সোনালি সকাল, রোদেলা দুপুর, পরন্ত বিকেল, গুধোলী সন্ধা, চাদণি রাত। সব রঙ্গে রাঙ্গিয়ে থাক আপনার সারাটি বছর, সারাটি জীবন। এই কামনায় “ঈদ মোবারাক”

৪. কিছু কথা অব্যক্ত রয়ে যায়, কিছু অনুভূতি মনের মাঝে থেকে যায়, কিছু ভালবাসার স্মৃতি নিরবে কাদে। শুধু এই দিন সব ভুলিয়ে দেয়, ঈদ মোবারাক

৫. শপ্ন গুলো সত্যি হোক, সকল আশা পুরনো হোক। দু:খ দুরে যাক, সুখে জীবন ভরে যাক। জীবনটা হোক ধন্য, ঈদ মোবারাক তোমার জন্য। ঈদ মোবারাক

৬. আজ দু:খ ভুলার দিন, আজ মন হবে যে রঙ্গিন। আজ প্রান খুলে শুধু গান হবে, আজ সুখ হবে সিমাহীন। তার একটাই কারন, আজ যে ঈদের দিন। ঈদ মোবারাক

৭. শুভ রজনী, শুভ দিন, রাত পরোলেই
ঈদের দিন। উপভোগ করবে
সারাদিন, ঈদ পাবে না
প্রতিদিন। দাওয়াত রইলো ঈদের
দিন। “ঈদ মোবারক”

৮. যেদিন দেখব ঈদের চাঁদ, খুশি
মনে কাটবে রাত। নতুন সাজে সাজব
আজ, আজ হলো ঈদের দিন আনন্দে
কাটবে সারাদিন। ঈদ বোবারক

৯. ঈদের দাওয়াত তোমার তরে,
আসবে তুমি আমার ঘরে। কবুল করো
আমার দাওয়াত, না করলে পাবো
আঘাত। তখন কিন্তু দেবো আড়ি,
যাবো না আর তোমার বাড়ি।

১০. আনন্দের এই সময় গুলো, কাটুক
থেমে থেমে । বছর জুড়ে তোমার
তরে, ঈদ আসুক নেমে । “ঈদ মোবারক”

১১. নতুন পোশাক পরে নিও, বেশি
করে ঈদের সেলামী নিও । সেমাই
খেও পেট ভরে ঘুরাফেরা করো মন
ভরে । ঈদ মোবারাক বলো প্রান
খুলে ।

এই ছন্দ দিয়ে এসএমএস করে আপনার প্রিয় মানুষগুলোকে আপনি খুশি করতে পারেন।

শেষ কথা

আশা করছি ইসলামে ঈদের ইতিহাস এবং ঈদ সম্পর্কিত সকল কথা এবং তথ্য বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন। ঈদ মানে আনন্দ আর যেহেতু ত্যাগ স্বীকার করে এই দিনের আনন্দ উপভোগ করতে পারি তাই আমাদের উচিত পূর্ণাঙ্গ রূপে ঈদ উদযাপন করা।পাশাপাশি আমাদের সাধ্যমত সবার সাথে এই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। যেন কেউ এই ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়।

আরো পড়ুন: ৫০০০ টাকার মধ্যে ভালো মোবাইল ২০২৪

যদি পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে এবং এরকম আরো সুন্দর পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকবেন। যদি কোন কথা জানানো থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। আজকের মত এতটুকুই।দেখা হবে পরের কোন আর্টিকেলে

Visited 38 times, 1 visit(s) today

Leave a Comment

x